আহলান সাহলান মাহে রমাদান!
**************
শাবান মাস শেষ প্রান্তে। আত্মশুদ্ধি ও সংযম সাধনার বার্তা নিয়ে বিশ্ব মুসলিমের কাছে আগমন করতেছে পবিত্র মাহে রমাদান।রমাদান মাসের আগমন। জান্নাতি খুশবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা মন দুলতে থাকে প্রভুর প্রেমে। বৃষ্টির ফোয়ারার মতো আগমন রমাদান মাসের। খুলে যায় রহমতের সব দরজা। অবারিত ধারায় প্রভুর রহমত নামে বান্দার কলবে। আল্লাহর আলোয় আলোকিত হতে থাকে দিলের জমিন।আহলান সাহলান মাহে রমাদান।
হে প্রেমের মাস! ইবাদতের মাস! তুমি আসতে আর কত দেরি! এভাবেই রহমতের মাস রমাদাননের জন্য অপেক্ষা করেন আল্লাহ প্রেমিকরা। আল্লাহ প্রেমিকদের সর্দার নবিজি মুহাম্মাদ (সা.) এ শিক্ষাই দিয়েছেন তার উম্মতকে।
রজব মাস থেকেই রাসূল (সা.) রমাদানের প্রস্তুতি নিতেন। সব ব্যস্ততা কমিয়ে আনতেন একে একে। রমাদানের পুরো সময়টাই ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে দিতেন নির্বিঘ্নে।
রাসূল (সা.)-এর প্রিয় খাদেম হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন পশ্চিম আকাশে রজবের বাঁকা চাঁদ দেখা যেত, তখন রাসূল (সা.) দরদমাখা কণ্ঠে মহান প্রভুর কাছে বারবার এ দোয়া করতেন-‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান। ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদের হায়াত রমাদান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (সুনানে নাসায়ি ও মুসনাদে আহমাদ।)
এভাবেই রজব ও শাবানের প্রতিটি দিন রমাদানের প্রার্থনায় সিক্ত হতো রাসূল (সা.) ও সাহাবিদের (রা.) নুরানি চোখগুলো। শাবান এলেই প্রতীক্ষার নদীতে জোয়ার আসত। হৃদয়ের প্রতীক্ষা যেন শেষ হয় না। তাই রমাদানের প্রস্তুতির জন্য শাবান থেকেই নফল রোজা শুরু করতেন নবিজি (সা.) ও সাহাবিরা।
রমাদানের প্রতীক্ষা-অশ্রু আর হৃদয়ের ব্যকুলতা মিলে প্রশান্তির ঝরনা ঝরে মুমিন আত্মায়। মুমিন হৃদয় সিক্ত হয় প্রভুর প্রেমে। রমজান এলে জান্নাতি পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ে ভেতরে বাইরে সবখানে। মাটির গ্রহে জান্নাতি সৌরভ উপলব্ধি করেন আল্লাহ ও রাসূল প্রেমিক বান্দারা। এ যেন এক প্রশান্তিময় ‘মুত্তাকিনি পরিবেশ’। এখনই শ্রেষ্ঠ সময় রমাদানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার। যতটা পারা যায় কর্মব্যস্ততা কমিয়ে আনার সময় বয়ে চলে। আমাদের প্রত্যেকেরই নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত, নবিজি (সা.) এবং তার প্রিয় অনুসারীরা যেভাবে রমাদানের জন্য প্রস্তুতি নিতেন, যেভাবে প্রতীক্ষার অশ্রু ঝরিয়ে আত্মাকে সবুজ ও সতেজ করতেন, আমরা কি সেভাবে করতে পেরেছি? আমরা কি সিয়াম পালনের জন্য আমাদের আত্মাকে প্রস্তুত করেছি?
আমরা কি আত্মার ধুলো পরিষ্কার করেছি? পাপ আর মিথ্যার মিশ্রণে দুর্গন্ধময় আত্মায় কি কুরআনের পারফিউম স্প্রে করেছি? না। করিনি। ‘আজই করব’-এ কথাও হয়তো কেউ ভাবিনি। যদি ভাবতাম, তবে মুসলিম বিশ্বে ‘মুত্তাকিনি হাওয়া’ কিছুটা হলেও অনুভব হতো। যে হাওয়া মাটির দেহ ভেদ করে প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয় মানবাত্মায়।
দুনিয়াজুড়ে বিশ্বাসী আত্মাগুলো আজ শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। অশান্তির আগুনে জ্বলছে প্রতিটি আত্মা। এ আগুন নেভানোর পথ একটাই। প্রতীক্ষা। আল্লাহর প্রেমে প্রতীক্ষমান আত্মা নিয়ে তাঁর দেখানো পথে চলতে পারলেই হৃদয়ের প্রতীক্ষা প্রশান্তি হয়ে ঝরবে বিশ্বাসী আত্মায়। পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন আয়াতে এমন প্রেম ও প্রশান্তির প্রতীক্ষার কথাই বলা হয়েছে। সিয়াম শুধু পেটের উপোস নয়। আত্মার উপোস। অর্থের উপোস। চিন্তার উপোস। কর্মের উপোস। সারা জীবন সত্যের পথে চলা এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠার প্রশিক্ষণের নাম সিয়াম। মাটির গ্রহে জান্নাতি পরিবেশ তৈরির সাধনা এবং বিশ্বাসী বান্দা মুত্তাকি হয়ে দুনিয়াজুড়ে মুত্তাকিনি হাওয়া বইয়ে দেওয়ার নামই আসল সিয়াম।
আসুন, আমরা যারা মুমিন মুসলমান দাবিদার তারা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মিকভাবে নিজেদের গড়ে তুলি। আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে তাঁর রহমতের দরজা অবারিত করে দিয়েছেন তা যেন একাগ্র এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে কাজে লাগাই।
মো. মনিরুল ইসলাম
প্রভাষক, চান্দেরচর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা।
হোমনা- কুমিল্লা।
মোবাইল ০১৮৬২৪৪৫৪০১